
মাইন্ডফুলনেস একধরনের স্বাভাবিক মানসিক অবস্থান। আমাদের অবস্থান, আমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকা বা আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তার উপর নির্ভর করে মাত্রাতিরিক্ত রাগ, বিরক্তি বা খুশি প্রকাশ করা থেকে বিরত করাই হল মাইন্ডফুলনেস পরিস্থিতি ।
বিগত কয়েক দশকে বৌদ্ধধর্ম থেকে উদ্ভূত মাইন্ডফুলনেসের একটি ধর্মনিরপেক্ষ রূপ পশ্চিমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। গুগলের এনগ্রাম টুল অনুযায়ী, ১৯৬০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে "মাইন্ডফুলনেস" শব্দটির ব্যবহার ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর বই, ক্লাস এবং রিট্রিট এখন পাওয়া যায়, এমনকি ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ২,৫০০টি ধ্যান অ্যাপ চালু হয়েছে।
মাইন্ডফুলনেস কী?
একটি মৌলিক স্তরে, মাইন্ডফুলনেস মানে হলো অমনোযোগিতার বিপরীত। আমরা যখন অমনোযোগী হই, তখন কোনো কাজ না ভেবে করি। তবে মাইন্ডফুলনেসের ধ্যানমূলক অনুশীলনে প্রধান লক্ষ্য হলো নিজেকে অন্য সকল কাজ থেকে সরিয়ে নিয়ে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া।
ধ্যানের সময় নিঃশ্বাসের মতো একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়। তবে এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারণ মানুষ সাধারণত এমন পুনরাবৃত্তিমূলক কিছুর ওপর দীর্ঘসময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। এজন্য ধ্যানের মাধ্যমে মনোযোগ বিচ্যুতির বিষয়টি লক্ষ করে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে আনা এবং নিজেকে না বিচার করার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়।
থেরাপি হিসেবে মাইন্ডফুলনেস
মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক থেরাপি শিখিয়ে দেয় কিভাবে আমাদের আবেগপ্রবণ মনোভাবের শিকার না হয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পদ্ধতিটি কারো জন্য উপকারী হতে পারে আবার কারো জন্য তেমন কাজে আসতে নাও পারে।
তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ধ্যান নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি ট্রমার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারে বা মানসিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
সমালোচকরা দাবি করেন যে, মাইন্ডফুলনেসের বাণিজ্যিকীকরণ এবং এটি সামরিক বাহিনী ও কর্পোরেটদের কাজে লাগানো মাইন্ডফুলনেসের মূল নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তবে, ব্যক্তিগত মানসিক শান্তি ও উদ্বেগ কমানোর জন্য মাইন্ডফুলনেস চেষ্টা করা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
মাইন্ডফুলনেস ও আত্মজ্ঞান
মাইন্ডফুলনেসের আরেকটি উপযোগিতা হলো এটি আমাদের চেতনা ও আত্মপরিচয় সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে পারে। এটি কখনো কখনো আত্মপরিচয়ের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং আমাদের শেখায় যে অনেক চিন্তা বা আচরণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
মাইন্ডফুলনেস ও বর্তমানের প্রতি মনোযোগ
মনোযোগী হওয়া মানে হলো যেকোনো কাজের প্রতি নতুন চোখে তাকানো। এটি কেবল চাপ কমায় না, বরং আমাদের কাজে আরও সৃজনশীল হতে সাহায্য করে।
মাইন্ডফুলনেসের একটি বড় সুবিধা হলো এটি বর্তমানের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। যখন আমরা কোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করি, তখন উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার জন্য কম জায়গা থাকে এবং এটি সুখকর প্রবাহের অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে পারে।
মাইন্ডফুলনেস, ধ্যান বা যেকোনো মনোযোগী কাজ আমাদের বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া শিখিয়ে মানসিক চাপ কমাতে ও জীবনকে আরও পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এর প্রয়োগ ও উপকারিতা ব্যক্তি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
বহুল পঠিত
পাঠকের পছন্দে শীর্ষ সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ
সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ
মন্তব্য করুন 💬